সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের চাপ এবং ঋণজর্জরিত পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের দাবি, ৫০% মহার্ঘ ভাতা প্রদানের মাধ্যমে এই সংকট কাটানো অত্যন্ত জরুরি। এই দাবিটি ২০২৪ সালের মহার্ঘ ভাতা প্রণয়ন প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে। নিচে এই বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো আলোচনা করা হলো:
Table of Contents
মহার্ঘ ভাতা প্রণয়ন কমিটি ও সভার তারিখ
- সরকার ইতিমধ্যেই মহার্ঘ ভাতা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে।
- কমিটির একটি মিটিং গতকাল (২৩ ডিসেম্বর ২০২৪) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনিক ব্যস্ততার কারণে সেটি হয়নি।
- এ মাসেই প্রথম মিটিং অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
মহার্ঘ ভাতা: কবে থেকে প্রযোজ্য হবে?
- সরকারি চাকরিজীবীরা আগামী সপ্তাহেই মহার্ঘ ভাতার প্রথম মিটিং থেকে সিদ্ধান্ত আসার আশা করছেন।
- কর্মচারীদের জন্য শতকরা হার বেশি নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
- পূর্ববর্তী মহার্ঘ ভাতা আদেশ অনুসারে সর্বনিম্ন ১,৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬,০০০ টাকা নির্ধারিত ছিল।
- এই বছরও একই ধরণের কাঠামো বজায় রাখা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেতন বৈষম্য ও কর্মচারীদের উদ্বেগ
- মহার্ঘ ভাতা প্রণয়ন কমিটিতে কর্মচারীদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা নিয়ে কর্মচারীরা হতাশ।
- বেতন বৈষম্যের বিষয়ে কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
- কর্মচারীদের দাবি, বৈষম্যহীন ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়নের আগে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা উচিত।
সরকারি কর্মচারীদের ৭ দফা দাবি (২০২৪)
- বৈষম্যহীন ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়ন: পে কমিশন গঠন করে ৫০% মহার্ঘ ভাতা প্রদান।
- পদবী ও গ্রেড পরিবর্তন: অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের প্রধান সহকারীদের ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ।
- টাইম স্কেল পুনর্বহাল: হরণকৃত ৩টি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল।
- প্রাথমিক শিক্ষকদের উন্নয়ন: সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা।
- ব্লক পোস্টের কর্মচারীদের পদোন্নতি: ৫ বছর পরপর উচ্চতর গ্রেড প্রদান।
- রেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন: ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য।
- বৈষম্যমূলক আদেশ বাতিল: টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রবর্তন।
মহার্ঘ ভাতা এবং বিশেষ সুবিধা
- মহার্ঘ ভাতা এবং বিশেষ সুবিধা ভাতা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত নয়।
- নতুন পে স্কেল জারি না হওয়া পর্যন্ত উভয় সুবিধাই বহাল রাখার প্রস্তাব রয়েছে।
সংশোধিত বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা বরাদ্দের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। আজ সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে রাজস্ব খাতে ব্যয় সীমিত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির চাপ মোকাবিলায় উন্নয়ন বাজেট সমন্বয় করার প্রয়োজন হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাজেট-ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে উন্নয়ন বাজেটে কাটছাঁট করার বিকল্প নেই। তবে এটি করার সময় অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
উন্নয়ন বাজেট হ্রাসের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন বাজেটে কাটছাঁট করলেও তা জিডিপিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কারণ, এক বছরের জন্য বড় কোনো বিনিয়োগ স্থগিত থাকলেও উৎপাদন সক্ষমতা কমে যায় না। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সবসময় বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় না। বরং, সীমিত সম্পদ দিয়ে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করাই বেশি কার্যকর হতে পারে।’
তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরে সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট প্রণয়নের জন্য তাঁরা এবার সাধারণ নিয়মের চেয়ে আগেই কাজ শুরু করতে চান। যেখানে সাধারণত মার্চে এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়, সেখানে জানুয়ারির শেষ দিকেই তা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, সংশোধিত বাজেটে মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির প্রতি সরকারের মনোযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বাজেট ঘাটতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিবেচনা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, মহার্ঘ ভাতা কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা বজায় রাখতে এবং বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তাঁদের সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উন্নয়ন বাজেট কমালে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জিপিএফ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার নিয়ম ২০২৪ সালে আরও সহজ করা হয়েছে।
- জিপিএফ হিসাব, লোনের হিসাব এবং বিল ফরম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সরকারি পোর্টাল ভিজিট করা যেতে পারে।
উপসংহার
সরকারি কর্মচারীদের ৫০% মহার্ঘ ভাতা দাবিটি সময়োপযোগী এবং কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে, বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি জিপিএফ সংক্রান্ত সেবা আরও সহজলভ্য করে কর্মচারীদের সুবিধা বাড়ানো উচিত।