মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতার পরিমাণ ৮০০ টাকা প্রতি মাসে নির্ধারণ করেছে, এবং এই ভাতার মেয়াদ এখন দুই বছর পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা গর্ভবতী মা এবং তাদের সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি প্রোগ্রাম। মায়ের সুস্থতা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মের পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি করা হচ্ছে।
Table of Contents
মাতৃত্বকালীন ভাতার পরিমাণ ও মেয়াদ
বর্তমানে, মাতৃত্বকালীন ভাতার পরিমাণ প্রতি মাসে ৮০০ টাকা। মা ৩৬ মাস পর্যন্ত এই ভাতা পাবেন, যা মোট ২৮,৮০০ টাকা। এই ভাতার উদ্দেশ্য গর্ভবতী মায়ের আর্থিক সহায়তা করা, যাতে তারা পুষ্টিকর খাবার এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বর্তমানে প্রায় ৮ লক্ষ হতদরিদ্র মা’কে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করছে। এই প্রকল্পের আওতায় মায়েরা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার জন্য সহায়তা পাচ্ছেন। এর মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি গ্রহণ, প্রসবকালীন সেবা এবং প্রসবােত্তর সেবা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও প্রদান করা হচ্ছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট
ভাতাভোগী হওয়ার শর্তাবলী
মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। এই শর্তাবলী অনুসারে:
- প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণকারী মা হতে হবে (সর্বোচ্চ দুটি সন্তান)।
- মা’র বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে এবং ৩৫ বছরের উপরে নয়।
- পরিবারের মাসিক আয় ২০০০ টাকা বা তার নিচে হতে হবে।
- গর্ভধারণের প্রমাণপত্র (কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে) থাকতে হবে।
এই শর্তাবলী পূরণ করে যারা আবেদন করবেন, তাদের নাম প্রাথমিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া, বিশেষভাবে দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী মায়েদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সরকারের গর্ভবতী মায়ের জন্য স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত তথ্য
ভাতার বিতরণ পদ্ধতি
মাতৃত্বকালীন ভাতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি প্রদান করা হয়। প্রোগ্রাম অফিসাররা এই ভাতা বিতরণে দায়িত্ব পালন করেন। ভাতাভোগীদের নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়।
গর্ভধারণের সময় গর্ভপাত হলে তিন মাস পর্যন্ত ভাতা অব্যাহত থাকবে। সন্তান জন্মের পর দুই বছরের মধ্যে যদি কোন কারণে মৃত্যু ঘটে, তবে মায়ের বাকি সময়ের ভাতা প্রদান করা হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং সমাজে প্রভাব
এই মাতৃত্বকালীন ভাতা কর্মসূচি গর্ভবতী মা ও শিশুদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মায়েরা আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি প্রসবকালীন সেবা, পুষ্টির তথ্য, এবং শিশু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা পাচ্ছেন। এর ফলে মা ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস পাবে এবং দেশে একটি সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গড়ে উঠবে।
মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর গাইডলাইন
মাতৃত্বকালীন ভাতা শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি উদ্যোগ। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে এই কর্মসূচির আওতায় আরও প্রসার ঘটাতে চায় এবং মাতৃত্বকালীন ভাতার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যা সমাজের প্রতিটি দরিদ্র গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে।
সর্বশেষ তথ্য ও প্রস্তাবনা
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাতৃত্বকালীন ভাতার মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য উন্নতিতে আরও সহায়ক হবে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে, আরও বেশি মা এবং শিশু উপকৃত হবে, এবং একটি সুস্থ জাতি গঠনে সহায়তা করবে।